শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ অপরাহ্ন
শাকিব বিপ্লব ও আহমেদ কাওছার ক্ষৌণিশ:উজিরপুর উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফিজুর রহমান ইকবালের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। নির্বাচনের শেষপ্রান্তে এসে এই প্রার্থীর পক্ষে অভাবনীয় গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যেখানেই এই আওয়ামী লীগ নেতার পথসভা, সেখানেই আমজনতার ভিড় লক্ষণীয়। দলমতের ভেদাভেদ ভুলে ভোটাররা এককাতারে সামিল হয়েছে। আবার আওয়ামী লীগের কর্মি-সমর্থকরা প্রতিহিংসার ভয়ে এতোদিন নীরব থাকলেও ক্রমেই সরব হতে শুরু করেছে বিবেকের তাড়নায়।
এমন অভিমত পোষণ করে স্থানীয়রা বলছে, গত সোমবার উজিরপুর উপজেলা শহরে আকস্মিক দুই শতাধিক কর্মি-সমর্থক নিয়ে নিজ গ্রাম থেকে আগমন এবং গণসংযোগে নামলে নিস্তব্দ ভোটাররা যেভাবে সরব হয়েছিলো, তা দেখেই অনুমান করা যায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার জবাব দিতে তারা মুখিয়ে আছে। বিদ্রোহী প্রার্থীর এই অনুকূল পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আ. মজিদ সিকদারের শিবিরে কাঁপুনি ধরেছে। এখন কিভাবে এই পরিস্থিতির উত্তোরণ ঘটানো যায়, তার নানা কৌশল নেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ভেতরকার একাধিক সূত্র জানায়, ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে ইকবালের বিরুদ্ধে মনগড়া কেচ্চাকাহিনী পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরার মিশন শুরু হয়েছে। তার প্রতিফলন গতকাল দেখা গেছে। স্থানীয় বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় একই ধারার একই লেখা ছাপানো হয়। সেক্ষেত্রে স্পর্শকাতর বিষয়- সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন মিশ্রিত অভিযোগ তুলে প্রকাশিত খবর ইনিয়েবিনিয়ে দীর্ঘায়িত করা হলেও কোথাও সুনিদৃষ্ট করে উল্লেখ নেই কে বা কারা, কখন, কোথায় আক্রান্ত হয়েছে। অথবা কিভাবে ইকবাল হুমকী দিয়েছে।
অথচ উল্লেখ করা হয়, সংখ্যালঘুরা হুমকীর কারণে এলাকা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পথে। যদি তা হয়েই থাকে, তবে তার প্রমাণ উপস্থাপন উহ্য রাখা হলো কেনো? প্রকাশিত এই সংবাদ দেখে স্থানীয় পাঠকমহল সহসাই অনুমান করে নেয়, ইকবালকে কাবু করতেই মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এনিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, সংখ্যালঘুদের প্রভাবিত করতে স্পর্শকাতর এই বিষয় নিয়ে সংবাদ তৈরির উদ্দেশ্য হচ্ছে- বিল-হাওরের জনপদ উজিরপুরের ৯টি ইউনিয়নের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অন্তত ৬টি ইউনিয়নেই ইকবালের জনপ্রিয়তা বা সমর্থন বেশি।
বিষয়টি পরিষ্কার যে, এই ইউনিয়নগুলোই ভোটের ফলাফলের নিয়ামক শক্তি হতে পারে। এসব এলাকায় ইকবালের প্রচারণা ও পথসভায় উপস্থিতির নজরকাড়া সংখ্যায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেখানে গেলেও সায় মিলছে না। এসব ভেবেই নির্বাচনী রাজনীতিতে সংখ্যালঘু সম্পদায়কে ঘিরে ইকবাল প্রসঙ্গে বিভ্রান্তির জালবিস্তার করার চেষ্টা চলছে। আবার কোথাও কোথাও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে- এই নিয়ে বাচ্চু রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে এতথ্য সমূলেই মিথ্যা। মজার বিষয় হচ্ছে- এক সময়ের জাসদ নেতা বাচ্চু এখন আওয়ামী লীগের মঞ্চে থেকে দলীয় নেতা ইকবালকে ভিন্ন মতাদর্শের হিসাবে আখ্যায়িত করে তাকে দল থেকে বহিস্কারের দাবি তুলেছে।
কিন্তু জাসদের এই নেতার অতীত ইতিহাস বলে- তিনি আওয়ামী লীগ বিদ্বেষি। উদাহরণ স্বরূপ একটি সূত্রের বর্ণনায় পাওয়া গেলো- এক সময় এই বাচ্চুই বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জামাল হোসেনের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিলো। তখন সংখ্যালঘুরা কতোটা নিরাপদ ছিলো, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না এই ঘটনার চুলছেঁড়া বিশ্লেষণে। উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশে অপারগতার শর্তে জানান, বাচ্চু দল বদল করে আওয়ামী লীগে এসেছিলো সুদিনে। বিপরীতে ইকবাল স্কুল-জীবন থেকেই আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতির সাথে জড়িত।
গত নির্বাচনে ইকবাল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিজয়ের পেছনে মূখ্য ভূমিকায় ছিলো সেখানকার সংখ্যালঘুদের ভোটের বাঁধভাঙা স্রোত। নির্বাচিত হওয়ার পর সংখ্যালঘু প্রভাবিত এলাকার উন্নয়নে ইকবালের অবদানের উদাহরণ এখনো জ্বলজ্বল করছে। অপর একটি সূত্রের দাবি, এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পেছনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন ইউপি চেয়ারম্যান তথা জল্লার নান্টু হত্যার সাথে তার সংশ্লিষ্ট থাকার কথা বলা হলেও আসলে এর পেছনে রয়েছে অন্য কাহিনী। তাও স্পষ্ট হয়ে গেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা নান্টু হত্যা মামলা নিয়ে নির্বাচনের পূর্ব থেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমে অন্তত ইকবালকে দলীয় মনোনয়ন থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হলেও সংখ্যালঘুদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারেনি। কারণ নান্টুর পরিবারসহ গোটা উপজেলাবাসীর কাছে প্রশাসন নিশ্চিত করেছে, কারা এই হত্যার সাথে জড়িত। সেখানে ওই প্রভাবশালী নেতার অনুসারিরাসহ বর্তমান দলীয় প্রার্থী বাচ্চুর একটি বলয় কমবেশি জড়িত।
বিষয়টি জানা সত্ত্বেও সংখ্যালঘু ভোটাররা মুখে কিছুই বলতে পারছে না আওয়ামী লীগের মঞ্চ থেকে প্রবল চাপ থাকায়। উপরোন্তু অনেককে বাধ্য করা হচ্ছে ইকবালের পাশ থেকে সরে যেতে। প্রকাশ্যে অনেকে দূরে থাকলেও মনেপ্রাণে তারা ইকবালকেই চায়। সংখ্যালঘুদের অভিমত হচ্ছে- ‘না পারছি বলতে বা সইতে’। তাদের ক্ষোভ নান্টুর ঘাতকরাই এখন নৌকায় আশ্রিত হয়ে ভোট চাইছে। অপর একটি নিশ্চিত করেছে- ভোটের দিন সন্নিকটে চলে আসায় এতোদিন হুমকী-ধামকীর মধ্যে রাখতে সক্ষম হলেও সংখ্যালঘু ভোটাররাই ক্রমশ ইকবালের পক্ষে উঁকি-ঝুকি দিচ্ছে।
তা আঁচ করতে পেরেই মিডিয়ার ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে ইকবালের বিপক্ষে অপপ্রচার চালিয়ে ভোটের নিয়ামক শক্তিকে বিভ্রান্তির মধ্যে রেখে নির্বাচন উৎরাতে চায়। কিন্তু আভাস পাওয়া গেছে, সে চেষ্টা সফল হওয়ার বদলে হিতেবিপরীত হওয়ার রূপ নিচ্ছে ইকবালের স্বপক্ষে নীরব ভোটবিপ্লবের অপেক্ষায়।
Leave a Reply